ই কমার্স ও ই বিজনেস এর পার্থক্য |
ই-কমার্স ব্যবসা কি?
ই-কমার্স বা ইলেকট্রনিক কমার্স হলো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সেবা ও পণ্য কেনার এবং বিক্রয়ের ব্যবসায়িক পদ্ধতি। এটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে গ্রাহকদের সাথে বিনিময় করে ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পন্ন করে এবং নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য ও সেবা পরিষ্কারের জন্য অনলাইন প্রতিষ্ঠানের সাথে কার্যকর যোগাযোগ করে। ই-কমার্স অধিবেশনের ফলে প্রতিষ্ঠানগুলি আরও বিস্তৃত বাজারে আপনার পণ্য ও পরিষেবা প্রদানের সুযোগ পায়, যা একটি মাত্রায় স্থানীয় বাজার থেকে সীমাবদ্ধ থাকে।
ইলেকট্রনিক কমার্সের ইতিহাস
ইলেকট্রনিক কমার্স শুরু হয় ইউজিন বিয়াজনের 1979 সালে একটি তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানির মাধ্যমে, যার ধারণাটি ছিল ব্যবসা এবং কর্মচারীদের মধ্যে তথ্য প্রদান করা। তখন থেকেই এই কনসেপ্টটি প্রগতি করে আসছে এবং ইলেকট্রনিক কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসায়িক লেনদেন আরও সহজ হয়েছে।
ই-কমার্সের প্রকার (Types or Models of E-Commerce)
ই-কমার্স, বা ইলেকট্রনিক কমার্স, বিভিন্ন কারণের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের বা মডেলে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে। এখানে ই-কমার্সের কিছু সাধারণ প্রকার/মডেল রয়েছে:
ব্যবসা-থেকে-ভোক্তা (B2C): B2C ই-কমার্স ব্যবসা এবং পৃথক ভোক্তাদের মধ্যে পরিচালিত লেনদেনকে বোঝায়। এই মডেলে, ব্যবসাগুলি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহকদের কাছে পণ্য বা পরিষেবা বিক্রি করে। উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে অনলাইন খুচরা দোকান, অনলাইন ভ্রমণ বুকিং সাইট এবং খাদ্য বিতরণ পরিষেবা।
বিজনেস-টু-বিজনেস (B2B): B2B ই-কমার্সে দুই বা ততোধিক ব্যবসার মধ্যে লেনদেন জড়িত। উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে শিল্প সরঞ্জামের জন্য অনলাইন মার্কেটপ্লেস, সফ্টওয়্যার-এ-সার্ভিস (SaaS) প্ল্যাটফর্ম এবং প্রকিউরমেন্ট পোর্টাল।
ভোক্তা-থেকে-ভোক্তা (C2C): C2C ই-কমার্স ব্যক্তিদের একে অপরের সাথে সরাসরি পণ্য বা পরিষেবা বাণিজ্য, ক্রয় এবং বিক্রয় করতে সক্ষম করে। এটি মধ্যস্থতাকারীদের প্রয়োজনীয়তা দূর করে এবং ভোক্তাদের পিয়ার-টু-পিয়ার লেনদেনে জড়িত হতে দেয়। অনলাইন শ্রেণীবদ্ধ বিজ্ঞাপন, নিলাম ওয়েবসাইট এবং পিয়ার-টু-পিয়ার শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মগুলি হল C2C ই-কমার্সের উদাহরণ। জনপ্রিয় C2C প্ল্যাটফর্মের মধ্যে রয়েছে eBay, Craigslist এবং Airbnb।
ভোক্তা-থেকে-ব্যবসা (C2B): C2B ই-কমার্স ঘটে যখন স্বতন্ত্র ভোক্তারা ব্যবসায় পণ্য, পরিষেবা বা তাদের দক্ষতা অফার করে। এই মডেলটি প্রায়শই ফ্রিল্যান্সিং, ক্রাউডসোর্সিং বা ব্যবহারকারী-উত্পাদিত সামগ্রী প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত থাকে। উদাহরণস্বরূপ, আপওয়ার্ক বা ফাইভারের মতো ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসগুলি ব্যক্তিদের ব্যবসায় তাদের দক্ষতা এবং পরিষেবাগুলি অফার করতে সক্ষম করে।
বিজনেস-টু-গভর্নমেন্ট (B2G): B2G ই-কমার্স ব্যবসা এবং সরকারী সংস্থার মধ্যে লেনদেন জড়িত। এতে অনলাইন প্রকিউরমেন্ট সিস্টেম, ই-টেন্ডারিং এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যা বেসরকারী ব্যবসার কাছ থেকে সরকারী ক্রয় সহজতর করে। এই মডেলে, ব্যবসাগুলি সরকারী চুক্তির জন্য বিড করতে পারে বা অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে সরকারী সংস্থাগুলিকে তাদের পরিষেবা দিতে পারে।
মোবাইল কমার্স (এম-কমার্স): এম-কমার্স বলতে মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে পরিচালিত ই-কমার্স লেনদেনকে বোঝায়, যেমন স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট। এটি ভোক্তাদের ক্রয় করতে, অনলাইন পরিষেবাগুলি অ্যাক্সেস করতে বা চলতে চলতে আর্থিক লেনদেন করতে দেয়। মোবাইল অ্যাপস, মোবাইল-অপ্টিমাইজ করা ওয়েবসাইট এবং মোবাইল পেমেন্ট সলিউশন হল এম-কমার্সের মূল উপাদান।
সোশ্যাল কমার্স: সোশ্যাল কমার্স ই-কমার্স এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে একত্রিত করে। এতে সরাসরি সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্কের মধ্যে পণ্য কেনা-বেচা বা ক্রয়ের সিদ্ধান্ত জানাতে সামাজিক সুপারিশ এবং পর্যালোচনা ব্যবহার করা জড়িত।
এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে ই-কমার্সের এই ধরনের/মডেল পারস্পরিকভাবে একচেটিয়া নয়, এবং অনেক ব্যবসা তাদের লক্ষ্য দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে বা বিভিন্ন বাজারের অংশগুলি পূরণ করতে একাধিক মডেল নিয়োগ করতে পারে।
ই-কমার্স ওয়েবসাইট এর কিছু উদাহরণ
কিছু ই-কমার্স ওয়েবসাইটের উদাহরণ নিম্নলিখিত ভাবে দেওয়া হলঃ
- Online Auctions
- E-Service
- Flight Booking
- Online Digital
- GoodsInternet Banking
- Online Shopping
- E-Ticketing
- Online Train
Amazon (www.amazon.com): Amazon হলো একটি প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা সরবরাহকারী বড় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম। এটি বিশ্বব্যাপী বাজার যেখানে গ্রাহকরা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পণ্য কেনার পছন্দ করেন। এটি বিবিধ পণ্যের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক বই, মিডিয়া সামগ্রী, ইলেকট্রনিক উপকরণ, কার এবং বাইক ইত্যাদি সরবরাহ করে।
eBay (www.ebay.com): eBay হলো একটি প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা বিক্রয় ও ক্রয়ের জন্য একটি প্রসিদ্ধ সাইট। এটি ব্যক্তি থেকে ব্যবসা, ব্যবসা থেকে ব্যবসা এবং ব্যবসা থেকে ব্যক্তির মধ্যে কানেকশন স্থাপন করে। এখানে মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যের নিউ-অ্যান বা ব্যবসা করা যায়, যেমন আকর্ষণীয় পণ্য, উপকরণ, কার এবং বাইক।
Alibaba (www.alibaba.com): Alibaba হলো বিশ্বব্যাপী ব্যবসা প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গ্রাহকরা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পণ্য কেনার পছন্দ করেন এবং ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য বিক্রয় করতে পারেন। এটি মূলত বিশ্বব্যাপী থাকলেও বিশেষত চীন থেকে বিভিন্ন পণ্য কেনার পছন্দের জন্য জনপ্রিয়।
Flipkart (www.flipkart.com): Flipkart হলো ভারতের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মধ্যে একটি। এটি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পণ্য বিক্রয় করে, যেমন ইলেকট্রনিক্স, ফ্যাশন, মোবাইল এবং মহিলা পণ্য। এর অংশীদার হয়েছে Walmart, যা একটি প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা বিক্রয়ের বড় বিক্রেতা।
Etsy (www.etsy.com): Etsy একটি প্রয়োজনীয় হাতের কাজ ও আর্ট পণ্য সরবরাহকারী ওয়েবসাইট। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের নিজস্ব নির্মিত পণ্য বিক্রয় করার সুযোগ দেয়, যা আমিষ, হ্যান্ডমেড পণ্য, জুয়েলারি, ক্র্যাফটসমূহ, টেক্সটাইল, প্রিন্টস, গ্লাসওয়ার, ডিজাইনার পণ্য ইত্যাদি সম্পর্কিত হতে পারে।
এগুলি শুধুমাত্র কয়েকটি উদাহরণ এবং এইগুলির বাইরে আরও অনেক ই-কমার্স ওয়েবসাইট রয়েছে। বিভিন্ন দেশের উদাহরণগুলির মধ্যেও পুঁজিবাজার (www.pujibazar.com) এবং দারাজ পার্টাল (www.daraz.com) বাংলাদেশের ই-কমার্স ওয়েবসাইট।
ইলেকট্রনিক কমার্সের সুবিধা
ই-কমার্সের ব্যবসায়িক মডেলে অনেক সুবিধা রয়েছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলি নিম্নরূপঃ
বিস্তৃত বাজার: ই-কমার্স সম্পন্ন ব্যবসায়িক প্ল্যাটফর্ম দ্বারা গ্রাহকরা এখন বিশ্বব্যাপী বাজারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এটি গ্রাহকদের পছন্দসই পণ্য এবং পরিষেবার সম্ভাবনা বাড়ানোর সুযোগ প্রদান করে।
সুসংগঠিত ও সহজ লেনদেন: ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম দ্বারা গ্রাহকরা সহজেই পণ্য কিনতে এবং লেনদেন সম্পন স্বপ্নপূরণ করতে পারেন। গ্রাহকরা পণ্য সম্পর্কে বিশদ তথ্য পেতে পারেন, সমান্য মূল্যে পণ্য সম্পর্কে তথ্য প্রাপ্ত করতে পারেন এবং সহজেই পণ্যগুলির মূল্যায়ন করতে পারেন।
সময় এবং শ্রম সংযোজনের মাত্রা কমানো: ই-কমার্স ব্যবসায়ে পণ্য এবং পরিষেবা সরবরাহের জন্য সময় এবং শ্রমের প্রয়োজন কম। গ্রাহকরা সহজেই পণ্য বাছাই করতে পারেন, অর্ডার পরিচালনা করতে পারেন এবং পণ্যগুলি সরবরাহ পেতে পারেন সময় এবং পরিশ্রম সংযোজনে অপরিহার্য কমে।
গ্রাহক মূল্যায়ন এবং পরামর্শ: ই-কমার্স ব্যবসায়িক পদ্ধতিতে, গ্রাহকরা আরও সহজেই পণ্য রেটিং, পরামর্শ এবং পর্যালোচনা পাতে পারেন। এটি গ্রাহকদের পণ্যের মান এবং গুণগত মান সম্পর্কে উপযুক্ত সুচারু পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করে।
ব্যবসা পরিচালনার সুবিধা: ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করার জন্য গ্রাহকদের পরিচালনায় অনেক কম চাহিদা হয়। স্টোর, স্টক ম্যানেজমেন্ট, অর্ডার পরিচালনা এবং লেনদেনের কাজগুলি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম দ্বারা সহজ হয়ে যায়।
ই-কমার্সের অসুবিধা
ই-কমার্স ব্যবসা একটি নতুন এবং অন্যতম ব্যবসায়িক মডেল। কিছু অসুবিধাগুলি নিম্নলিখিত:
মানসম্পদের অভাব: ই-কমার্সের জন্য ক্লিয়ারেন্স কেন্দ্র এবং স্টোরহাউস এর মতো মানসম্পদের প্রয়োজন হতে পারে যা সংগ্রহ এবং সরবরাহে অসুবিধা সৃষ্টি করে।
সংযোগ অভাব: ই-কমার্স ব্যবসা অবসান্ন এলাকায় ব্যবসায়িক পরিষেবা প্রদানের জন্য অন্যতম ভুল সংযোগ অথবা মাধ্যমে সংকল্প দিয়ে কঠিন হতে পারে।
ই-কমার্স ব্যবসার শুরু করার গাইডলাইন
ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে নিম্নলিখিত গাইডলাইনগুলি অনুসরন করতে পারেন:
ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করুন: ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করার আগে একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করা উচিত। আপনার লক্ষ্য, লক্ষ্যগুলি এবং আপনার কার্যক্রমগুলি পরিচালনা করার জন্য একটি পরিকল্পনা বানানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কেট রিসার্চ করুন: আপনার লক্ষ্যগুলি পরিচালনায় এবং উচ্চমানের লাভের জন্য আপনার প্রতিযোগিতার অবস্থান জানতে মার্কেট রিসার্চ করুন। গ্রাহকদের পছন্দ, প্রতিস্পর্ধা, পণ্যের দাম ও মার্জিন সহ বিভিন্ন মানসম্পদ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করুন।
একটি ওয়েবসাইট তৈরি করুন: ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে একটি প্রফেশনাল ওয়েবসাইট প্রয়োজন। একটি ওয়েবসাইটে গ্রাহকদের বিশদ পণ্যের তথ্য, মূল্য, অর্ডার প্রক্রিয়া ইত্যাদি সহ সম্পূর্ণ তথ্য প্রদান করা উচিত।
অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থা তৈরি করুন: একটি নিরাপদ এবং সুবিধাজনক অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে তৈরি করুন। গ্রাহকরা বিভিন্ন পেমেন্ট অপশন ব্যবহার করে পণ্য ক্রয় করতে পারেন।
মার্কেটিং এবং প্রচার করুন: আপনার ই-কমার্স ব্যবসায়িক পদ্ধতিতে পণ্য এবং পরিষেবা প্রচার করতে পারেন। সামাজিক মাধ্যম মার্কেটিং, ডিজিটাল বিজ্ঞাপন এবং ইমেল মার্কেটিং সহ বিভিন্ন মার্কেটিং প্রচার পদ্ধতি ব্যবহার করুন।
গ্রাহকের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করুন: গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করুন এবং তাদের প্রতিক্রিয়া ও পরামর্শ মেলানোর চেষ্টা করুন। তাদের প্রতিক
আমাদের শেষ কথা
ই-কমার্স বা ইলেকট্রনিক কমার্স হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেবা ও পণ্য কেনার এবং বিক্রয়ের ব্যবসায়িক পদ্ধতি। এটি আধুনিক যুগে ব্যবহৃত হওয়া একটি উদ্ভাবন। এর মাধ্যমে লোকাল বাজারের সীমানা ছাড়াই বিশ্বব্যাপী বাজারের সাথে গ্রাহকদের সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন